1. m.a.roufekhc1@gmail.com : alokitokha :
রেড ক্রিসেন্টে’র অর্থ সহায়তায় খাগড়াছড়ির ৩২ পাড়ার ভাগ্য বদল - আলোকিত খাগড়াছড়ি

রেড ক্রিসেন্টে’র অর্থ সহায়তায় খাগড়াছড়ির ৩২ পাড়ার ভাগ্য বদল

  • প্রকাশিতঃ বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে
মো. দিদারুল আলম (রাফি),খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়ি জেলার অতি দরিদ্র ৩২টি গ্রামের জীবনমান উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। খাগড়াছড়ি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের অধীনে চলমান ইকোনমিক সিকিউরিটি (ইকোসেক) প্রকল্পের অধীনে ১৪৬২ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির অর্থায়নে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
গত ২০১৪ সাল থেকে খাগড়াছড়িতে ইকোসেক সিএইচটি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। জেলার ৬টি উপজেলায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত হতদরিদ্র ৩২টি গ্রামের ১৪৬২ পরিবারকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে প্রতি পরিবারকে নগদ অনুদান হিসেবে ৩০ হাজার টাকা করে প্রদানের পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গবাদি প্রাণী পালন ও কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৯ সালে ৩৪ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে চাহিদা অনুয়ায়ী অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ জন টেইলারিং, ৪ জন কম্পিউটার, ৬ জন ইলেক্ট্রিক্যাল, ১ জন ইলেক্ট্রনিক্স, ২ জন পোল্ট্রি, ২ জন বিউটিফিকেশন ও ৭ জন গবাদি প্রাণী পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহন শেষে অনুদান পেয়ে নিজস্ব মালিকানায় ব্যবসা পরিচালনা করছে।
প্রকল্পের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সর্বাধিক হতদরিদ্র পরিবারকে সুফলভোগী হিসেবে নির্বাচনের জন্য প্রতিটি গ্রাম দক্ষ টীমের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। গ্রাম নির্বাচনের পর বেসলাইন সার্ভের মাধ্যমে প্রতি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ এবং সোস্যাল র‌্যাংকিং বা সামাজিক ক্রমবিন্যাসের মাধ্যমে যোগ্য সুফলভোগী নির্বাচন চূড়ান্ত হয়। সুফলভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়াটি গ্রামে গঠিত কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট কমিটির মাধ্যমে সর্বাধিক স্বচ্ছতার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
সরেজমিনে খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা, মহালছড়ি, পানছড়ি, মাটিরাঙা ও গুইমারা উপজেলার প্রকল্পভূক্ত পাড়া ঘুরে সুফলভোগী পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের চিত্র দেখা গেছে।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাস্থ কমলছড়ি ইউনিয়নের নতুন বাজার পাড়ার সুফলভোগী আফরোজা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর কোন কাজ না থাকায় আগে অনেক কষ্টে সংসার চালাতাম। রেড ক্রিসেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা পেয়ে প্রথমে একটি গরু কিনি। একবছর পর একটি বাছুর সহ গরু বিক্রি করে স্বামীকে ব্যাটারিচালিত টমটমটা কিনে দেই। প্রতি মাসে এখন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় আসে। আমার বড় ছেলে একাদশ শ্রেনীতে ও ছোট ছেলে দশম শ্রেনীতে পড়াশুনা করছে। টমটমের আয়ের টাকায় সংসার খরচ এবং লেখাপড়ার খরচ মেটাতে পারছি। আয়ের টাকা থেকে জমিয়ে আরেকটি গরু কিনেছি।’
মহালছড়ি উপজেলার মাইচ্ছড়ি নরেন্দ্র কার্বারি পাড়ার শুভ রানী ত্রিপুরা বলেন, ‘আমি রেড ক্রিসেন্ট থেকে টাকা পেয়ে একটি গরু ও একটি ছাগল কিনি। এখন আমার দুটি গরু ও ১৭টি ছাগল হয়েছে। গরুর দুধ বিক্রি করে সংসারে ব্যয় করতে পারছি।’
দীঘিনালা উপজেলাস্থ বোয়ালখালী ইউনিয়নের চিত্ত মেম্বার পাড়ার সুফলভোগী পদ্মলতা ত্রিপুরা বলেন, ‘রেড ক্রিসেন্ট থেকে টাকা পেয়ে আমি ছাগল কিনি এবং জমি ও পুকুরে মাছ চাষ করি। এবার ৩৫ হাজার টাকার ধান পেয়েছি এবং ১৪ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। বর্তমানে ৭টি ছাগল রয়েছে। আগে একবেলা খেলে দু’বেলা না খেয়ে থাকতাম। এখন তিনবেলা খেতে পারছি।’
মহালছড়ি উপজেলার কেয়াংঘাট ইউনিয়নের করল্যাছড়ি পাড়ার সুমিত্রা চাকমা বলেন, ‘আমি এবং আমার স্বামী আগে চায়ের দোকান করে কোনরকম সংসার চালাতাম। রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে আমি যুব উন্নয়ন থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ শেষে রেড ক্রিসেন্ট আমাকে ৪৫ হাজার টাকার অনুদান দেয়। এরপর সেলাই মেশিন ও কাপড় কিনে ব্যবসা শুরু করি। এখন প্রতি মাসে আমার ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। সেলাই কাজ থেকে আয়ের টাকায় সংসার ভালোভাবে চালাতে পারছি।’
খাগড়াছড়ি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট অফিসার আব্দুল গনি মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে আমরা এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। খাগড়াছড়ির সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমরা কাজ করছি।’
খাগড়াছড়ি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সেক্রেটারি মো. শানে আলম বলেন, ‘রেড ক্রিসেন্ট খাগড়াছড়িতে মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের সহযোগিতায় সোসাইটির সিডি বিভাগের মাধ্যমে খাগড়াছড়ির হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করছি আমরা। প্রতি বছর ইকোসেক প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রতি পরিবারের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পভূক্ত পাড়াগুলোতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।’
খাগড়াছড়ি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের ভাইস-চেয়ারম্যান এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে ইকোসেক প্রকল্পের মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারগুলো উপকৃত হচ্ছে। যাদের আগে নুন আনতে পানতা ফুরাতো তারা এখন তিনবেলা ঠিকমতো খাওয়ার পাশাপাশি সংসারের অন্যান্য চাহিদা মেটাতে পারছে। আমরা প্রায়সময় প্রকল্প এলাকাগুলো পরিদর্শন করি। খাগড়াছড়ির প্রান্তিক জনেগোষ্ঠিকে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য সোসাইটির সিডি বিভাগ ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ